বর্তমান সংসদ কি গণতন্ত্রের প্রতীক?
কয়েক দিন আগে একজন গুণী ব্যক্তির একটি সুন্দর বক্তব্য শুনলাম। একপর্যায়ে তিনি বলেছেন, 'সংসদ গণতন্ত্রের প্রতীক'। অত্যন্ত মূল্যবান কথা। রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় গণতন্ত্রের চর্চার যে কয়েকটি ব্যবস্থা বিদ্যমান, তার মধ্যে সংসদীয় পদ্ধতি অন্যতম। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শাসনব্যবস্থায় এ কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে এবং এতে করে ওই সব দেশের গণতন্ত্রায়ণের চর্চা ও উৎকর্ষ সাধন সম্ভব হয়েছে। প্রচলিত সংসদীয় পদ্ধতির পথিকৃৎ বলা যায় যুক্তরাজ্যকে। ভারত এ বিষয়ে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে গণ্য হতে পারে। যেকোনো গণতন্ত্রেÿ ক্ষমতার মূল মালিক জনগণ এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা জনগণের স্বার্থে এ ক্ষমতা ব্যবহার করবেন, এটাই লক্ষ্য।
সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্তরে অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে। সংসদের উদ্দেশ্য থাকে সকল প্রকার ক্ষমতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয় সাধন, পরস্পরের মধ্যে জবাবদিহির মাধ্যমে দায়বদ্ধতার সংস্কৃতি সৃষ্টি ও সার্বিকভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি। লক্ষ্য থাকে সংবিধান সংশোধন, আইন প্রণয়ন ও অন্য যেকোনো প্রকারে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা, যাতে করে কেউই এককভাবে ক্ষমতাধর হয়ে অন্য সবার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম না হন। একনায়কতন্ত্রের বিপরীত অবস্থান গণতন্ত্রের। সংসদীয় ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মুখ্য দায়িত্ব থাকে সংসদের ওপর। এ দায়িত্ব পালন সুষ্ঠু ও সহজতর করার জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বা একটির জায়গায় দুটি সংসদ রাখার বিধানও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
বাংলাদেশের শাসনপদ্ধতি বা সরকারব্যবস্থা এককক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামোর বলে দাপ্তরিকভাবে বলা হয়। সংসদ এলাকাভিত্তিক, সরাসরি জনগণের ভোটে ৩০০টি আসন ও সাংসদদের ভোটে বর্তমানে ৫০টি মহিলা সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা গঠিত হয়। সাংসদদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান নিয়োগ পান। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। সংসদ নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে, তারাই সাধারণত তাদের দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তিনি আবার সেই দলের সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন।
সংসদের প্রায় সব সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হয়। সংবিধানের বিধান (৭০ অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী দলীয় সাংসদেরা দলীয় যেকোনো প্রস্তাবে সমর্থন দিতে বাধ্য থাকেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান ও দলীয় সংসদীয় দলের প্রধান। তিনি তাঁর দলীয় সাংসদদের সমর্থন লাভে নিশ্চিত থাকেন। ফলে নির্বাহী বিভাগের বা এককথায় প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো প্রস্তাব সংসদে পেশ করলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলীয় সাংসদদের সমর্থনে তা অনুমোদিত হবে, এটা স্বাভাবিক এবং তাই হয়ে আসছে।
সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সমর্থনের বাধ্যবাধকতা থাকায় সংসদপ্রধান (স্পিকার) নির্বাচন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ব্যবহারকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই পদ্ধতিতে অপসারণও প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় সংসদের স্পিকারের কার্যকালের স্থায়িত্বও প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে। রাষ্ট্রপতির নিয়োগও একইভাবে হয় এবং সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর আওতাভুক্ত। অবশ্য রাষ্ট্রপতির অপসারণে দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আবশ্যক। বর্তমান সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সে সংখ্যার অধিক দলীয় সাংসদ আছেন। ফলে পদে থাকতে হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষভাজন হতে ও থাকতে হবে, এটাই অনেকের ধারণা।
উচ্চ আদালতের বিচারক, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক পদসমূহ সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী) কর্তৃক নিয়োগের জন্য নির্বাচন করা হয় বা তাঁর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে। ওই নিয়োগপ্রাপ্ত পদসমূহের অপসারণ দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের দ্বারা করার বিধান বর্তমান সংসদে করা হয়েছে। এখন সংসদে সরকারি দলের এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শুধু নিয়োগ নয়, অপসারণ করার কর্তৃত্বের অধিকারী।
সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থায় ক্ষমতা ও দায়িত্ব বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্তরে অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাহায্যে। সংসদের উদ্দেশ্য থাকে সকল প্রকার ক্ষমতা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানসমূহের সমন্বয় সাধন, পরস্পরের মধ্যে জবাবদিহির মাধ্যমে দায়বদ্ধতার সংস্কৃতি সৃষ্টি ও সার্বিকভাবে ক্ষমতার ভারসাম্য তৈরি। লক্ষ্য থাকে সংবিধান সংশোধন, আইন প্রণয়ন ও অন্য যেকোনো প্রকারে এ বিষয়টি নিশ্চিত করা, যাতে করে কেউই এককভাবে ক্ষমতাধর হয়ে অন্য সবার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম না হন। একনায়কতন্ত্রের বিপরীত অবস্থান গণতন্ত্রের। সংসদীয় ব্যবস্থায় গণতন্ত্রের চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মুখ্য দায়িত্ব থাকে সংসদের ওপর। এ দায়িত্ব পালন সুষ্ঠু ও সহজতর করার জন্য দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ বা একটির জায়গায় দুটি সংসদ রাখার বিধানও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে।
বাংলাদেশের শাসনপদ্ধতি বা সরকারব্যবস্থা এককক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় কাঠামোর বলে দাপ্তরিকভাবে বলা হয়। সংসদ এলাকাভিত্তিক, সরাসরি জনগণের ভোটে ৩০০টি আসন ও সাংসদদের ভোটে বর্তমানে ৫০টি মহিলা সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত সদস্যদের দ্বারা গঠিত হয়। সাংসদদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে দেশের প্রধানমন্ত্রী বা সরকারপ্রধান নিয়োগ পান। তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হয়। সংসদ নির্বাচনে যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে, তারাই সাধারণত তাদের দলীয় প্রধানকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করে। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী তিনি আবার সেই দলের সংসদীয় নেতা নির্বাচিত হন।
সংসদের প্রায় সব সিদ্ধান্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে গৃহীত হয়। সংবিধানের বিধান (৭০ অনুচ্ছেদ) অনুযায়ী দলীয় সাংসদেরা দলীয় যেকোনো প্রস্তাবে সমর্থন দিতে বাধ্য থাকেন। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান ও দলীয় সংসদীয় দলের প্রধান। তিনি তাঁর দলীয় সাংসদদের সমর্থন লাভে নিশ্চিত থাকেন। ফলে নির্বাহী বিভাগের বা এককথায় প্রধানমন্ত্রীর যেকোনো প্রস্তাব সংসদে পেশ করলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলীয় সাংসদদের সমর্থনে তা অনুমোদিত হবে, এটা স্বাভাবিক এবং তাই হয়ে আসছে।
সরকারি দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সমর্থনের বাধ্যবাধকতা থাকায় সংসদপ্রধান (স্পিকার) নির্বাচন সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটের ব্যবহারকারী হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই পদ্ধতিতে অপসারণও প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারভুক্ত হওয়ায় সংসদের স্পিকারের কার্যকালের স্থায়িত্বও প্রধানমন্ত্রীর হাতে থাকে। রাষ্ট্রপতির নিয়োগও একইভাবে হয় এবং সে কারণে প্রধানমন্ত্রীর আওতাভুক্ত। অবশ্য রাষ্ট্রপতির অপসারণে দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আবশ্যক। বর্তমান সংসদে প্রধানমন্ত্রীর সে সংখ্যার অধিক দলীয় সাংসদ আছেন। ফলে পদে থাকতে হলে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর সন্তোষভাজন হতে ও থাকতে হবে, এটাই অনেকের ধারণা।
উচ্চ আদালতের বিচারক, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশন, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, মানবাধিকার কমিশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক পদসমূহ সরকারপ্রধান (প্রধানমন্ত্রী) কর্তৃক নিয়োগের জন্য নির্বাচন করা হয় বা তাঁর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকে। ওই নিয়োগপ্রাপ্ত পদসমূহের অপসারণ দু-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সাংসদের দ্বারা করার বিধান বর্তমান সংসদে করা হয়েছে। এখন সংসদে সরকারি দলের এ সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী তাঁদের শুধু নিয়োগ নয়, অপসারণ করার কর্তৃত্বের অধিকারী।
৫ জানুয়ারি, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ও তার ফলে সৃষ্ট সংসদ বর্ণিত পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী। কিছু কারণ আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ওগুলো সংশোধন না করে বরং বর্তমানে সমস্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে
সংসদের একটি প্রধান কাজ সরকার ও সরকারপ্রধানের জবাবদিহির ব্যবস্থা করা। বিরোধী দল এ দায়িত্বে মুখ্য ভূমিকা পালনের কথা। বর্তমান সংসদে প্রধান বিরোধী দল (জাতীয় পার্টি) মন্ত্রিপরিষদে প্রতিনিধিত্ব থাকার কারণে একই সঙ্গে সরকারের অংশীদার। ওই দলের নেতা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত। ফলে সরকারবিরোধী কোনো ভূমিকা রাখা তা সে সংসদেই হোক বা সংসদের বাইরেই হোক, ওই দলের পক্ষে সম্ভব নয়।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদে প্রধান বিরোধী দল সরকারের কোনো প্রস্তাবে না ভোট দিলে, সংবিধানের ৫৫ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব করার জন্য সে বিরোধীদলীয় মন্ত্রীদের সাংসদ পদ বাতিল হবে। ফলে প্রধান বিরোধী দল সাংবিধানিক কারণে সংসদে সরকারের বিরোধিতা করতে অক্ষম। বিরোধী দলপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে হওয়ায় সংসদের বাইরের এ দলের সরকারবিরোধী ভূমিকা গ্রহণযোগ্য হয় না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য সব প্রতিষ্ঠানকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহির আওতায় আনা বা দায়বদ্ধ করার প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকায় তিনি তাঁরÿ ক্ষমতা ব্যবহারে অপ্রতিরোধ্য। ক্ষমতার এই ভারসাম্যহীনতা কোনোক্রমেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কাম্য নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি একনায়কতন্ত্রের যেকোনো সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে বলা যায়।
৫ জানুয়ারি, ২০১৪ সালের নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় ও যে পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। গঠিত সংসদের অর্ধেকের বেশি সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত হয়েছেন। তাঁদের সমর্থনে সরকারপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। সে কারণে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের সম্পৃক্ততা কতটুকু ছিল, সে বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে।
যে আসনগুলোতে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে বাস্তবে অধিকাংশ ভোটার ভোট দিতে যাননি বা যেতে পারেননি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তা ছাড়া, নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতার মালিক জনগণ। বেশির ভাগ ভোটার তাঁদের ক্ষমতা ব্যালটের মাধ্যমে অন্য কাউকে ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করার সুযোগ পাননি। তারপরও সেটার ব্যবহার কতটুকু নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, সে প্রশ্নও থেকে যায়।
নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারপ্রধান বা সার্বিকভাবে সরকারকে দায়বদ্ধ করার যে সুযোগ ও অধিকার জনগণের ছিল, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তা তাঁরা হারিয়েছেন বলে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা। তাঁদের আশঙ্কা, খুব শিগগির বা খুব সহজে এ অধিকার তাঁরা ফিরে পাবেন কি না। বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা পরিবর্তন ছাড়া এটা সম্ভব মনে হচ্ছে না।
৫ জানুয়ারি, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ও তার ফলে সৃষ্ট সংসদ বর্ণিত পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী। কিছু কারণ আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ওগুলো সংশোধন না করে বরং বর্তমানে সমস্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংসদের মুখ্য দায়িত্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মূল্যবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সংসদ সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। বরং এখন একনায়কত্বের সহায়ক হিসেবে অবতীর্ণ বলা যায়।
ফলে বর্তমান সংসদ গণতন্ত্রের প্রতীক নয়। বরং মৃত গণতন্ত্র সংরক্ষণের কফিনের প্রতীক হিসেবে অনেকের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শান্তিপূর্ণভাবে এ সমস্যা উত্তরণে দেশপ্রেমিক নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশনসহ অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে নিরপেক্ষ ও অধিকতর কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের: সাবেক মন্ত্রী, প্রেসিডিয়াম সদস্য, জাতীয় পার্টি।
সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের কারণে সংসদে প্রধান বিরোধী দল সরকারের কোনো প্রস্তাবে না ভোট দিলে, সংবিধানের ৫৫ (৩) অনুচ্ছেদে বর্ণিত উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন সম্ভব করার জন্য সে বিরোধীদলীয় মন্ত্রীদের সাংসদ পদ বাতিল হবে। ফলে প্রধান বিরোধী দল সাংবিধানিক কারণে সংসদে সরকারের বিরোধিতা করতে অক্ষম। বিরোধী দলপ্রধান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে হওয়ায় সংসদের বাইরের এ দলের সরকারবিরোধী ভূমিকা গ্রহণযোগ্য হয় না।
বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা বা দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য সব প্রতিষ্ঠানকে কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে সক্ষম।
প্রধানমন্ত্রীকে জবাবদিহির আওতায় আনা বা দায়বদ্ধ করার প্রতিষ্ঠানসমূহ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকায় তিনি তাঁরÿ ক্ষমতা ব্যবহারে অপ্রতিরোধ্য। ক্ষমতার এই ভারসাম্যহীনতা কোনোক্রমেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় কাম্য নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এ পদ্ধতি একনায়কতন্ত্রের যেকোনো সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে বলা যায়।
৫ জানুয়ারি, ২০১৪ সালের নির্বাচন যে প্রক্রিয়ায় ও যে পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাকে স্বাভাবিক বলা যায় না। গঠিত সংসদের অর্ধেকের বেশি সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত হয়েছেন। তাঁদের সমর্থনে সরকারপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। সে কারণে, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জনগণের সম্পৃক্ততা কতটুকু ছিল, সে বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে।
যে আসনগুলোতে নির্বাচন হয়েছে, সেখানে বাস্তবে অধিকাংশ ভোটার ভোট দিতে যাননি বা যেতে পারেননি বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। তা ছাড়া, নানা ধরনের অনিয়মের অভিযোগ ব্যাপকভাবে আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের ক্ষমতার মালিক জনগণ। বেশির ভাগ ভোটার তাঁদের ক্ষমতা ব্যালটের মাধ্যমে অন্য কাউকে ব্যবহারের জন্য হস্তান্তর করার সুযোগ পাননি। তারপরও সেটার ব্যবহার কতটুকু নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য, সে প্রশ্নও থেকে যায়।
নির্বাচনের মাধ্যমে সরকারপ্রধান বা সার্বিকভাবে সরকারকে দায়বদ্ধ করার যে সুযোগ ও অধিকার জনগণের ছিল, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তা তাঁরা হারিয়েছেন বলে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা। তাঁদের আশঙ্কা, খুব শিগগির বা খুব সহজে এ অধিকার তাঁরা ফিরে পাবেন কি না। বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থা পরিবর্তন ছাড়া এটা সম্ভব মনে হচ্ছে না।
৫ জানুয়ারি, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ও তার ফলে সৃষ্ট সংসদ বর্ণিত পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে দায়ী। কিছু কারণ আগে থেকেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ওগুলো সংশোধন না করে বরং বর্তমানে সমস্যা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সংসদের মুখ্য দায়িত্ব গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ও মূল্যবোধকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। সংসদ সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। বরং এখন একনায়কত্বের সহায়ক হিসেবে অবতীর্ণ বলা যায়।
ফলে বর্তমান সংসদ গণতন্ত্রের প্রতীক নয়। বরং মৃত গণতন্ত্র সংরক্ষণের কফিনের প্রতীক হিসেবে অনেকের কাছে প্রতীয়মান হচ্ছে।
শান্তিপূর্ণভাবে এ সমস্যা উত্তরণে দেশপ্রেমিক নাগরিকসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, সরকারি কর্মকমিশনসহ অন্য সব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার করে নিরপেক্ষ ও অধিকতর কার্যকর করার ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় সুশাসনের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিপর্যয়ের আশঙ্কা থেকেই যাবে।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের: সাবেক মন্ত্রী, প্রেসিডিয়াম সদস্য, জাতীয় পার্টি।
No comments:
Post a Comment